বাংলা স্কুপ, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪:
বিদ্যুতের উচ্চচাপ সংযোগ পেতে হলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ও প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেনের কোম্পানির সাবস্টেশন নিতে হবে। না নিলে সংযোগ নয়; এমন ভোগান্তিতেই ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিতরণ এলাকার গ্রাহকেরা। ডিপিডিসির এই দুই কর্মকর্তা বেশি দামে নিম্নমানের সাবস্টেশন কিনতে বাধ্য করতেন বলে অভিযোগ ওঠার পর একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং শাহাদাত হোসেন আওয়ামী প্রকৌশলীদের আরেক সংগঠন ডিপিডিসির ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর ছাড় পেয়ে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান তাঁরা।
জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব বরাবর ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির পক্ষে প্রকৌশলী রাকিব হাসান দুই পাতার একটি অভিযোগ (প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাখা ১১, নং-৬৩৯) দাখিল করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন মুখ্যসচিব বিষয়টি তদন্ত করে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অভিযোগের নথি নিয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ডিপিডিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক সাভারের ভাকুর্তায় প্রায় ৩০ কাঠা জমির উপর গড়েছেন বিদ্যুতের সাবস্টেশন কারখানা। ওসাকা পাওয়ার নামের ওই কারখানাটি এখন বন্ধ করে কাঠের দরজা তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছেন প্রকৌশলী রাজ্জাক। তবে সেখানে এখনও বিদ্যুতের সাবস্টেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ স্তুপ করে রাখা আছে।
অভিযোগ আছে, ডিপিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক তার ওসাকা পাওয়ারের সাবস্টেশন না কিনলে উচ্চচাপ সংযোগ দিতেন না। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সাধারণ সম্পাদক থাকার ক্ষমতা ব্যবহার করে গ্রাহককে নানাভাবে ভোগান্তিতে ফেলতেন।
রাজ্জাকের কোম্পানি থেকে সাবস্টেশন না কিনলে কেউ বিদ্যুতের উচ্চচাপ সংযোগ পেতেন না। এই চক্রের সাথে সেই সময়ে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) আব্দুর রউফ মিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। মাতুয়াইল, জুরাইন, শ্যামপুর ও কাজলায় রাজ্জাকের সিন্ডিকেট গ্রাহকদের সোলার প্যানেল নিতেও বাধ্য করেছিলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশক্রমে অভিযোগ তদন্তে ডিপিডিসির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর) আবু হেনা মোস্তফা কামালকে প্রধান করে কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সুপারিশে অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও ধরাছোয়ার বাইরে থাকেন দুই অভিযুক্ত প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন।
এই অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে উল্টো তদন্ত কমিটির প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামাল অন্যায্য আচরণের শিকার হন। জ্যেষ্ঠতায় এগিয়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা অমান্য করে তাঁকে পদোন্নতি না দিয়ে জুনিয়রদের পদোন্নতি দেয়। এ বিষয়ে আবু হেনা মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে জানান, এই তদন্ত করতে গিয়ে আমার ক্যারিয়ার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপনারা সবই জানেন। নতুন কিছু বলে ক্যারিয়ারের আর ক্ষতি করতে চাই না।
এদিকে, সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ও প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন। আব্দুর রাজ্জাক মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের বহুতল দুইটি বাড়ির মালিক। গ্রামের বাড়ি শেরপুরেও গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে আব্দুর রাজ্জাক ও শাহাদাত হোসেন বিভিন্ন জায়গায় লোভনীয় পোস্টিংয়ে ছিলেন। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার আসার পর বিএনপির প্রকৌশলীদের চাপের মুখে পড়ে ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসির উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ দপ্তরের দায়িত্ব দেয়।
প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের দুর্নীতির খোঁজ নিতে গেলে ডিপিডিসির এইচআর সূত্র জানায়, ২০২২ সালের শেষের দিকে তিনি কাজলায় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জহির স্টিল মিল নামে একটি কোম্পানি ৫ মেগাওয়াটের উচ্চচাপ বিদ্যুৎ সংযোগ বর্ধিত করতে আবেদন করলে সংযোগ নিয়ে করেন নয়ছয়। ওই গ্রাহকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিলেও ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই দিয়ে দেন ডিমান্ড নোট। এ ঘটনায় তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াসউদ্দিন জোয়ারদারের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে সূত্রের দাবি। পরবর্তীতে জানাজানি হয়ে গেলে ডিপিডিসিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ঘটনা তদন্তে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান নারায়ণগঞ্জের প্রধান প্রকৌশলী কামরুল আজমের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তদন্ত কমিটি প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাককে দায়ী করলেও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর এভাবেই অনিয়ম-দুর্নীতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
ওই অভিযোগপত্রে দেখা যায়, আওয়ামী প্রকৌশলীদের আরেক সংগঠন ডিপিডিসির ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ডিপিডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন সেফটি পাওয়ার কোম্পানি নামের এক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এই কোম্পানির সঙ্গে ডিপিডিসর একাধিক প্রকৌশলী জড়িত রয়েছেন। তাঁরা হলেন- আবুল বাসার, আমির হোসেন, মাহমুদ হোসেন, তৌফিক হোসেন, মো. সেলিম মিয়া ও এনায়েত হোসেন। প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বিপুল অর্থের মালিক। ঢাকায় রয়েছে তাঁর একাধিক ফ্ল্যাট। সূত্রের দাবি, ডিপিডিসির ৩৬টি ডিভিশনে বেশিরভাগ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া নিয়ন্ত্রণ করে শাহাদাত চক্র। অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
প্রতিবেদক/এসকে
এপিএসসিএলের ৩ কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ
ডেসকোর দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের লুটপাটের টাকা ফিরিয়ে আনার দাবি
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতা ছাড়া প্রকল্প-টেন্ডার নয় : জ্বালানি উপদেষ্টা
'বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোমড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে'
সুখবর দিলেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা